সোমবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৫, ১১:৫৫ অপরাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতায় ইসলাম

ধর্ম ডেস্ক:
মানব জীবনে অর্থব্যবস্থার গুরুত্ব অপরিসীম। নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রচারিত দ্বীন ইসলাম একটি জীবনমুখী ধর্ম। আর এ ধর্ম মানুষের বাস্তব জীবনমুখী পার্থিব সবক্ষেত্রেই দিকনির্দেশনা প্রদান করে। অর্থব্যবস্থার মাধ্যমে মানবজাতির যেমন পার্থিব জীবনের ব্যক্তিগত ও সামাজিক কল্যাণ লাভ করতে পারে, তেমনি পরকালীন জীবনেও কল্যাণ নিশ্চিত করতে পারে।

ইসলাম-পূর্ব আরবের অর্থনীতি ছিল খুবই মন্দা। অভাব-অনটন, ক্ষুধা-যন্ত্রণা ছিল তাদের নিত্যসঙ্গী। যৎসামান্য কিছু শিল্পকর্ম ছাড়া শিল্পের তেমন কোনো প্রসার ছিল না। ছিল না পরিকল্পিত কোনো অর্থব্যবস্থা। ব্যবসাই ছিল আরবদের আয়-উপার্জনের মূল মাধ্যম। চড়া সুদ একটি স্বতন্ত্র ব্যবসা হিসেবে তাদের জীবন প্রবাহের অংশে পরিণত হয়েছিল।

হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাদানি জীবনের শুরুতেই একটি সুদৃঢ় ইসলামি রাষ্ট্র গঠনের প্রয়াস চালান। আর অর্থনৈতিক কর্মকা- যেহেতু একটি রাষ্ট্রের স্থায়িত্ব ও সমৃদ্ধির বুনিয়াদ, এক্ষেত্রেও তিনি অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতার একটি পরিকল্পিত ছক ঘোষণা করেন। ফলে মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে নবী কারিম (সা.) আরব ভূমিতে আর্থিক সমৃদ্ধির মডেল মদিনা রাষ্ট্র উপহার দিয়েছেন এবং দারিদ্র্যপীড়িত মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে সক্ষম হয়েছিলেন।

নবী কারিম (সা.) ধন-বৈষম্য দূর করে সঞ্চয় ও বণ্টনের সামঞ্জস্য বিধান করেন। তৎকালীন যুগে কোনো সরকারি কোষাগার ছিল না। একটি দেশের সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি নির্ভর করে অর্থনৈতিকব্যবস্থার ওপর। তিনি আরবের যাবতীয় অফিস-আদালত সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য বায়তুল মাল বা সরকারি অর্থ তহবিল গঠন করেন। তখন যে কোনো অসহায় ব্যক্তির প্রয়োজনে এ তহবিল থেকে অর্থের জোগান দেওয়া হতো। রাষ্ট্রীয় কোষাগারের প্রয়োজনে নিয়মিত রাজস্বের প্রবর্তন করেন। যেমন-

জাকাতভিত্তিক অর্থব্যবস্থা : ইসলামের মৌলিক ইবাদতগুলোর অন্যতম হলো- জাকাত। ইসলামি রাষ্ট্রের বায়তুল মালের আয়ের অন্যতম উৎস জাকাত। অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধানে সমাজে জাকাতের ভূমিকা অনস্বীকার্য। জাকাতের অন্যতম উদ্দেশ্য, অসচ্ছল-গরিবদের অবস্থার পরিবর্তন। যাতে তারা আর্থিকভাবে সচ্ছলতা লাভ করতে পারে, অভাব থেকে মুক্তি পায়।

খারাজ : খারাজ অর্থ ভূমিকর। খারাজ বলা হয়, শাসক কৃর্তক ধার্যকৃত ভূমি রাজস্বকে।

উশর : আল্লাহর দেওয়া প্রাকৃতিক পানি দ্বারা যদি জমি আবাদ করে, তাহলে এক দশমাংশ। আর যদি নিজস্ব পানি দ্বারা আবাদ করে তাহলে বিশ ভাগের এক ভাগ গ্রহণ করাকে উশর বলে।

জিজিয়া : জিজিয়া অর্থ বিনিময়। ইসলামি রাষ্ট্রে ইসলামি আইনের অনুকূলে স্থায়ীভাবে বসবাসরত প্রাপ্তবয়স্ক, স্বাধীন, কর্মক্ষম অমুসলিম পুরুষদের থেকে জনপ্রতি বাৎসরিক ধার্যকৃত কর।

গনিমত ও ফাই : ইসলামি রাষ্ট্রের দুটি অন্যতম আয়ের উৎস হচ্ছে- গনিমত ও ফাই। কাফেরদের সঙ্গে যুদ্ধে জয়ী হলে তাদের পরিত্যক্ত যাবতীয় ধন-সম্পদ বিজয়ী ইসলামি রাষ্ট্রের এক বৈধ আয়বিশেষ। এগুলো নিয়মানুযায়ী মুজাহিদদের মধ্যে বণ্টন এবং একটি অংশ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেওয়া হতো।

নবী কারিম (সা.) আরও কিছু অর্থনৈতিক সংস্কার করেন। যথা-সুদ প্রথার বিলুপ্তি : ইসলামি অর্থব্যবস্থায় সুদের লেনদেন সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ। সুদকে বলা হয় শোষণের অন্যতম হাতিয়ার। বর্তমান পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থার ভিত্তি সুদের ওপর হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে সামাজিক জীবনে শোষণের বিস্তৃতি ঘটেছে। বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে। দেখা দিয়েছে মুদ্রাস্ফীতি। ইসলাম সুদকে সম্পূর্ণভাবে হারাম ঘোষণা করেছে।

অপব্যয় নিষিদ্ধকরণ : সম্পদ ব্যয় করার ক্ষেত্রে ভারসাম্য রক্ষা করার জন্য ইসলাম নির্দেশ দেয়। বিলাসিতায়, অহেতুক কাজে সম্পদ ব্যয় নবী কারিম (সা.) নিষিদ্ধ করেছেন। কোরআন মাজিদে বলা হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই অপব্যয়কারী শয়তানের ভাই।’

সম্পদের সুষম বণ্টন : ইসলামি অর্থনীতিতে সম্পদের ন্যায্য বণ্টনের ব্যবস্থা রয়েছে। রাষ্ট্রীয় সম্পদ ব্যয়ে ইসলামি অর্থনীতির অন্যতম মূলনীতি সুষম বণ্টন নিশ্চিত করা। যেন রাষ্ট্রের কতিপয় মানুষের হাতে সম্পদ কুক্ষিগত না হয়। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আল্লাহ জনপদবাসীর কাছ থেকে তার রাসুলকে যা কিছু দিয়েছেন, তা আল্লাহর, আল্লাহর রাসুলের, রাসুলের স্বজনদের, এতিমদের, অভাবগ্রস্ত ও পথচারীদের। যেন সম্পদ তোমাদের মধ্যে যারা বিত্তবান তাদের মধ্যে আবর্তন না করে।’ -সুরা হাশর :

দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স : রাষ্ট্রীয় সম্পদের সুফল লাভের পথে অন্যতম প্রধান অন্তরায় আর্থিক দুর্নীতি। নবী কারিম (সা.) স্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছেন, কোনো ব্যক্তি রাষ্ট্রীয় সম্পদ ব্যক্তি বা গোষ্ঠীস্বার্থে ব্যবহার করতে পারবে না। নবী কারিম (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর দেওয়া সম্পদ অন্যায়ভাবে ব্যয় করে, কেয়ামতের দিন তাদের জন্য জাহান্নাম নির্ধারিত।’ -সহিহ বোখারি : ৩১১৮

ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, মাত্র দশ বছরে নবী কারিম (সা.) কর্তৃক প্রবর্তিত মদিনায় অর্থনৈতিক যে বিকাশ ও উন্নয়ন ঘটতে শুরু করেছিল, তা ছিল সমকালীন বিশ্বের বিস্ময়। এরপর দীর্ঘ ৯০০ বছর ধরে সেই রাষ্ট্রব্যবস্থা দাপটের সঙ্গে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত ছিল। তার অনুসৃত কর্মসূচির বদৌলতে সুদূর স্পেন থেকে ইন্দোনেশিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত বিশাল মুসলিম বিশ্বে শোষণমুক্ত ও কল্যাণধর্মী নতুন এক অর্থনীতি গড়ে উঠেছিল।

অর্থনীতির জটিল আবর্তে পর্যুদস্ত মানবজাতির আজাদি এনেছিলেন ইসলাম ও নবী কারিম (সা.)। কিন্তু আজ বিশ্বব্যাপী পাশ্চাত্য পুঁজিবাদী অর্থনীতিই প্রবল। তার প্রভাব অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ভয়ংকর। যে অর্থনীতির কারণে মানব সমাজ আজ বিপর্যস্ত। মানবজাতি তার প্রাথমিক প্রয়োজন অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থানের সমস্যায় জর্জরিত। আধুনিক অর্থনীতিবিদরা তাদের সীমিত চিন্তাভাবনা দিয়ে সমস্যা সমাধানের নিরন্তর প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। কিন্তু মানবরচিত কোনো অর্থব্যবস্থাই মানবতার এই করুণ আর্তনাদকে স্থিতিশীল করতে পারবে না। এক্ষেত্রে বিশ্ব মানবতার মুক্তিরদূত মহানবী (সা.) নির্দেশিত ইসলামি অর্থব্যবস্থায়ই এনে দিতে পারে মানবতার মুক্তি ও কল্যাণ।

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION